প্রথম মিশন - Emperor's Empire
SUBTOTAL :
প্রথম মিশন

প্রথম মিশন

Short Description:

Product Description

 

প্রথম মিশন




পরের সকালে চোখ খুলে দেখি উঠতে কিছুটা দেরি হয়ে গিয়েছে। তাড়াহুড়া করে, মুখ ধুয়ে, রান্নাঘরে গেলাম নাস্তা তৈরি করতে। তখনই মনে পড়ল, প্রথমে তো গ্রিন টি বানাতে হবে। গ্রিন টি বানিয়ে, অ্যাডভোকেট সাহেবের রুমে নিয়ে গেলাম। ওখানে উনি ছিলেন না। তখন মনে করলাম, নিশ্চয়ই অফিস রুমে হবেন। অফিস রুমের দিকে যাওয়ার সময়, কারো সঙ্গে কথা বলার শব্দ শুনতে পারছিলাম। সকালে এমন সময়ে কারো আনাগোনা খুবই দুর্লভ। কিন্তু সেখানে দাড়িয়ে, কিছুক্ষণ কান পেতে, কথাগুলো শোনার পর বুঝতে পেলাম, আলাপটা ফোনে হচ্ছে। আমি চা এর ট্রে হাতে নিয়ে, অফিস রুমের ভিতরে ঢুকতে নিলাম। ঠিক সেসময় অ্যাডভোকেট সাহেব মা শব্দটি উচ্চারণ করলেন। আমি ইহা শুনে অবাক হয়ে সেখানে দাড়িয়ে রয়ে গেলাম। আসার পূর্বে তো বাবা বলেছিলেন, উনার মা এবং বাবা উভয়ই মারা গিয়েছিলেন। তাহলে এত মধুর সুরে কাকে মা বলে ডাকছিলেন? আমার মনের আশঙ্কা দূর করবার উদ্দেশ্যে রুমের ভিতরে ঢুকে, চা এর ট্রে টেবিলে রেখে, টেবিলের পাশে চুপচাপ দাড়িয়ে ছিলাম। আমার আগমনের ইতিমধ্যে অ্যাডভোকেট সাহেব ফোনের লোকটিকে বললেন, "আচ্ছা মা, এবার রাখি।" এটা বলেই ফোন রেখে দিলেন। আমাকে পাশে চুপচাপ দাড়িয়ে থাকা দেখে, জিজ্ঞাস করলেন, "কিছু বলতে চাও?"




আমি সাধারণত এসব ব্যক্তিগত প্রশ্ন করতে অনেক দ্বিধা বোধ করতাম। কিন্তু সেদিন বুকভরা সাহসের সঙ্গে জিজ্ঞাস করেই বসলাম, "আপনি ফোনে কার সঙ্গে কথা বলছিলেন?"
আমার আচরণে এমন বিরাট পরিবর্তন দেখে অ্যাডভোকেট সাহেব কিছুটা অবাক হয়েছিলেন, সেটা উনার চেহারা দেখেই বুঝতে পারছিলাম। অবাক হবারই কথা। যে মানুষ গতকাল রাত পর্যন্ত কদমে কদমে ভয় পেত, তার মধ্যে এমন সাহস তো কেউও আশা করতে পারে না। কিন্তু তবুও সে ব্যাপারটা এড়িয়ে গিয়ে, অ্যাডভোকেট সাহেব আমার প্রশ্নের সত্যি সত্যি উত্তর দিলেন। উত্তর শুনে তো আমার পায়ের নিচ থেকে জমি টেনে নেয়া হয়েছে, এমনটা বোধ হচ্ছিল।
অ্যাডভোকেট সাহেব এত অস্বাভাবিক একটা প্রশ্নের, খুবই স্বাভাবিক স্বরে উত্তর দিলেন, "আমার মায়ের সঙ্গে কথা বলছিলাম।"
"কিন্তু বাবা তো বলেছিলেন, আপনার মা-বাবা উভয়ই মারা গিয়েছেন।"
"তাও সত্য, কিন্তু পুরো সত্য নয়।"
"মানে?"




"মানে, আমার জন্মদাতা বাবা মারা গিয়েছিল, কিন্তু আমার জন্মদাত্রি মা মারা যায়নি। দুনিয়ার সামনে যেই মহিলাটি সারাটা জীবন আমার মা হিসেবে নিজেকে দাবি করছিল, সে মহিলার তো কোনো সন্তান জন্ম দেয়ার সক্ষমতাই ছিল না। বরং আমার জন্ম হয়েছিল এক পতিতার গর্ভে।"
অ্যাডভোকেট সাহেবের এই বক্তব্য শোনার সঙ্গে সঙ্গে রুমের মধ্যে সকালবেলার যে নীরবতা বিদ্যমান ছিল, তা হঠাৎ করে বাকি সকল বাহ্যিক শব্দকে দমন করে, আমার কানের মধ্যে একাকী বিরাজমান করতে লাগল। বাকি দুনিয়াটা কেমন বোবা হয়ে গিয়েছিল এটা শোনার পর। কিন্তু মনের কৌতূহল চেপে না রেখে, জিজ্ঞাস করলাম, "জি, কীভাবে?"
"আমার জীবনের সবচেয়ে অজানা রহস্য। আমি এটা জানতে পেলাম আমার বাবার কাছ থেকে যখন উনি মৃত্যুশয্যায় শুয়ে ছিলেন। হৃদরোগে আক্রান্ত আমার বাবা, হাসপাতালের রুমে বাকি সবাইকে বললেন বের হতে, আমার সঙ্গে কথা ছিল। তখন মৃত্যুর কিছু মুহূর্ত আগে, আমাকে সবকিছু বলে, পরকালের জন্য প্রস্থান করলেন। জীবন পঁচিশ বছরেরও বেশি সময় যাকে মা ভাবছিলাম, সে তো আমাকে জন্মই দেয়নি। আমাকে এই সংবাদ জানানোর সঙ্গে, আমার আসল মায়ের ঠিকানা দিয়ে গেলেন। জানো, সবচেয়ে অদ্ভুত ব্যাপার কি?"




"কি?"
"আমার মা একথা গোপন রাখার জন্য পেয়েছিল সেই সময়ের এক কোটি টাকা। তখনকার সময় এত টাকা তো অনেক জমিদারেরও ছিল না। কিন্তু এত টাকা দিয়ে আমার মা বাকিটা জীবন শান্তিতে কাটানোর সিদ্ধান্ত না নিয়ে, নিজস্ব এক পতিতালয় খুলে বসলেন।"
"কেন?"
"উনার পূর্বের পতিতালয়ের বোনদের কথা চিন্তা করে। তাদের সেখানে প্রচুর নিপীড়িত করা হতো এবং তাদের কাজের বেতনও ঠিকমতো পরিশোধ করা হতো না। তাই আমার মা নিজেরই একটা পতিতালয় স্থাপন করে ফেললেন।"
"নিজের সেই বোনদের নিয়ে তো উনি সমাজে একটা সম্মানজনক জীবনযাপন করতে পারতেন। তা না করে আবার এসবে জড়ালেন কেন?"
"কারণ উনি ভাল করেই জানতেন; এই সমাজ উনাকে যতই যা দেক, সম্মান আর দিবে না। যারা আমার মায়ের সঙ্গে নির্লজ্জ রাত যাপন করেছিল, তারা সরাসরি দুটো কথা বলতেও লজ্জা পাবে। উনি জানতেন; এই সমাজ উনার একটিমাত্র রূপ দেখেছে, তারা অন্য কোনো রূপ কখনওই মেনে নিতে পারবে না। এ সকল বিবেচ্য বিষয় মাথায় রেখেই উনি এত কঠিন একটা সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হলেন। তাই আমি সবসময় নিজের মানসম্মানের কথা মাথায় রেখে সবকিছু করে থাকি। কারণ আমি জানি; এই সমাজ কালো কাফন মেনে নিবে, কিন্তু সাদা কাফনে কালো দাগ মেনে নিতে পারবে না।"




"আপনার সৎ মায়ের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক কেমন ছিল?"
আমার এ প্রশ্নটা শুনে, অ্যাডভোকেট সাহেব একটা মুচকি হাসি দিয়ে বললেন, "খুবই অদ্ভুত একটা প্রশ্ন তোমার। কিন্তু তার উত্তর খুবই সহজ। আমি তো সারাজীবন তাকেই মা ভেবে এসেছি, তাই উনি মারা যাবার সময় প্রচুর কেঁদেছিলাম।"
"উনি কীভাবে মারা গিয়েছিলেন?"
"ব্রেস্ট ক্যান্সার। ফাইনাল স্টেজে ধরা পড়েছিল। তাই শত চেষ্টা সত্ত্বেও বাঁচাতে পারলাম না কেউও।"
"আচ্ছা, আপনার বাবা-মা একজন এতিম শিশু আলাদা করে কোনো এতিমখানা থেকেও তো নিয়ে আসতে পারতেন, তাই না?"
"হ্যাঁ! কিন্তু তখনকার সময় এটা বেশ অপমানজনক এবং নিন্দনীয় একটা ব্যাপার ছিল। তখনকার মানুষ কোনো অক্ষম নারী দেখলে, তালাক দিয়ে দেয়ার পরামর্শ দিত। তাই আমার সৎ মা আমার বাবাকে নিয়ে তার এলাকার এক পতিতালয়ে গেলো। সেখানে সবচেয়ে সুন্দরী এবং যুবতী মেয়ে হিসেবে আমার মাকে বেছে নিলো। অতঃপর নয়-দশ মাসের একটা লম্বা ছুটির কথা বলে তারা বিদেশে চলে গেল। শেষমেশ বিদেশ থেকে আসার সময়, মধ্যরাতের আঁধারে, আমাকে আমার প্রকৃত মায়ের কোল থেকে নিয়ে আসা হলো। এটাই ছিল আমার জীবনের সবচেয়ে গোপন একটা অজানা রহস্য। আমি আশা করি, তুমিও এটা গোপন রাখতে পারবে।"




"জি, অবশ্যই। আপনার গোপন তথ্য আজ থেকে আমারও গোপন তথ্য। এ সকল তথ্য আমি নিজের প্রাণ দিয়ে রক্ষা করবো।"
"ধন্যবাদ! এবার তোমার কাজের প্রসঙ্গে আসি, কি বলো?"
"হ্যাঁ, অবশ্যই। বলুন।"
"আচ্ছা, মনোযোগ দিয়ে শুনো। তুমি প্রথমত আজকে গুলিস্তানে অবস্থিত আমার মায়ের সেই পতিতালয়ে যাবা। সেখানে গিয়ে একজন পতিতার সঙ্গে তোমার পরিচয় করিয়ে দেয়া হবে। সেই পতিতার পাশে থেকে, তার দ্বারা বৃষ্টির স্বামীকে ফোন করাবা। সেই মহিলার কাজ হলো; সুন্দর করে কথা বলে, লোকটার উত্তেজনা বৃদ্ধি করা। সাবধানে থাকবে, সে যেন তোমার সম্বন্ধে কিছু না জানতে পারে। সেজন্য তুমি সেখানে একটা নকল নাম ব্যবহার করবে। মাকে ফোনে বলেছিলাম, তোমার নাম; ফারহান। ওখানে গিয়ে এই নামেই পরিচয় দিতে হবে। বাকি সবকিছু তোমার আসার পর বুঝাবো। এতক্ষণ যা কিছু বললাম, বুঝতে পেরেছ তো? কোনো প্রশ্ন থাকলে বলতে পারো।"
"আপনি যে গোয়েন্দাদের মতো তথ্য সংগ্রহের কথা বলছিলেন, তার কি হলো?"
"তা আমি তোমার আসার পর বলবো। কারণ বৃষ্টির স্বামীকে উত্তেজিত করার অংশটুকু ব্যর্থ হলে, সম্পূর্ণ পরিকল্পনাটা ব্যর্থ হবে।"




"জি, বুঝতে পেরেছি।"
এরপর অ্যাডভোকেট সাহেবের কাছ থেকে সেই পতিতালয়ের ঠিকানা নিয়ে, আমি সেখানের জন্য প্রস্থান করলাম। একটা বাস ধরে সোজা গুরিস্তানে নেমে, আশপাশের কিছু লোকের কাছে ঠিকানা জিজ্ঞাস করে, সেখানে পৌছালাম।
পৌছানোর পর অ্যাডভোকেট সাহেবের মায়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে, নিজের নকল পরিচয় দিয়ে, সেই নিয়োজিত পতিতার সঙ্গে দেখা করে, সবকিছু পরিকল্পনা অনুযায়ী করলাম। অ্যাডভোকেট সাহেবের পরিকল্পনা ঠিক সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়িত হয়েছিল। সবশেষে বাসায় ফিরে গেলাম। বাসায় পৌছে অ্যাডভোকেট সাহেবের কাছে সকল তথ্য প্রদান করলাম। তার পরের দিন সকালে আমাকে পাঠানো হয় আমার প্রথম গোয়েন্দা মিশনে পাঠানো হলো।

0 Reviews:

Post Your Review